Home জীবনযাপন দ্বীপের ভেতর দ্বীপ
জুলাই ৮, ২০২৩

দ্বীপের ভেতর দ্বীপ

বন্ধুরা মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম ছেঁড়া দ্বীপে যাব। এ দ্বীপে যেতে হলে আগে সেন্টমার্টিন যেতে হবে। অর্থাৎ দ্বীপের ভেতর দ্বীপ। এর আগে আমরা সেন্টমার্টিন এলেও ছেঁড়া দ্বীপে যাইনি। তাই এবার সেই সৌন্দর্যটাও দেখে আসব।

পাঁচ বন্ধু সময়ক্ষেপণ না করে পরদিনই রওনা দিলাম সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে। চট্টগ্রামের সিনেমা প্যালেস থেকে রাত ১২টায় গাড়িতে উঠলাম টেকনাফের উদ্দেশে। সারা রাত গাড়িতে ঘুমিয়ে ভোর ৬টায় নেমে গেলাম টেকনাফে। আমরা বাস থেকে নেমেই প্রথমে জাহাজের টিকিট কেটে নিই। কেয়ারি জাহাজের টিকিট নিয়েছি। টিকিট কাটার পর আমাদের দুই আড়াই ঘণ্টা সময় ছিল। নাশতা করা এবং ফ্রেশ হওয়ার পর আমরা জাহাজে উঠলাম প্রায় সাড়ে নয়টা-দশটার দিকে।

আমরা জাহাজে উঠার ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে জাহাজ ছেড়ে দেয়। জাহাজের চারপাশে তখন গাঙচিল উড়ছিল। জাহাজ যখন চলতে শুরু করে তখন হাজার হাজার পাখি জাহাজের চারপাশে উড়ছে। কি যে সুন্দর দৃশ্য! লিখে কিংবা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। এ সাদা সাদা পাখিদের উড়তে দেখাটাই আপনার ভ্রমণের সার্থকতা ধরে নিতে পারবেন। এ দৃশ্য আর কোথাও পাবেন না। মজার বিষয় হচ্ছে যখনই জাহাজ নদী ক্রস করে সমুদ্রে নামল তখনই গাঙচিলগুলো আর পিছু এলো না। এটাই ওদের শেষ গন্তব্য।

আমরা আনুমানিক দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পৌঁছালাম সেন্টমার্টিন জেটিতে। আমাদের পরিচিত একটা রিসোর্ট ছিল। যেখানে আমরা গতবারও ছিলাম। সেখানেই সোজা চলে গেলাম। পছন্দমতো একটা রুম নিলাম পাঁচজনের। ৬০০ টাকায় রুমটা আমাদের জন্য বেশ মানানসই এবং স্বল্প খরচেরও হয়েছে। এরপর আমরা তিনজন ফ্রেশ হয়ে নিয়ে ছিলাম। খুব ক্ষুধা লেগেছে। দুপুরের খাবার খেতে হবে। খাবার খেলাম সামুদ্রিক মাছ আর বেগুন ভাজা দিয়ে।

খাবার খেয়ে অমি, নাহিদ আর আবেদ দিলাম ভাতঘুম। অন্যদিকে মুন্না আর কবির বেড়াতে বের হলো। আমরা ঘুমাতে ঘুমাতে কখন সন্ধ্যা সাতটা বেজে গেল বলতে পারব না। সবাই একসঙ্গে সন্ধ্যার নাশতা সারলাম। হালকা নাশতা করলাম। রাতে আবার কোরাল মাছের বারবিকিউ করব। একটা মাছ কিনলাম আড়াই হাজার টাকা দিয়ে। মাছের বারবিকিউ হওয়া পর্যন্ত বিচে বসে সময় কাটাচ্ছিলাম। এক সময় খাবারের সময় হয়েছে। গরম গরম পরোটা দিয়ে মাছের বারবিকিউ বেশ চমৎকার। খাওয়া শেষে হোটেলের মামাকে তার পরোটা এবং বারবিকিউ বাবদ ২৬০ টাকা দিলাম।

এরপর বিচে গিয়ে পাঁচ বন্ধু বিশ্রাম নিলাম আর সাগরের জলরাশির শব্দ শুনছিলাম। আমাদের ভোরে উঠতে হবে। কারণ আমাদের গন্তব্য ছেঁড়া দ্বীপ। তাই তাড়াতাড়ি ঘুমোতে গেলাম। ভোর সাতটায় উঠে গেলাম। এরপর জেটি ঘাটে চলে এলাম তাড়াহুড়া করে। ট্রলার প্রতিজন ২০০ টাকা আসা-যাওয়ার ভাড়া। আমরা ৫ জন একহাজার টাকা দিয়ে উঠে পড়লাম। আমাদের সঙ্গে আরও সাত-আটজন পর্যটকও ট্রলারে উঠেছেন। ট্রলারের যাত্রী পুরোপুরি হওয়ার পর ট্রলারটি ছাড়া হয়। এটি ছাড়তে ছাড়তে আটটা বেজে যায়।

ট্রলারে জীবনে প্রথমবার উঠলাম। ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে এ ট্রলার ছেঁড়া দ্বীপের পাড় পর্যন্ত যাবে না। পাড়ের অনেক দূরে সাগরেই দাঁড়াবে। কারণ পাড়ের কাছে গেলে পাথর এবং শৈবালে আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এ অল্প পথটুকু আবার ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে আসতে হবে। ট্রলারের যাত্রাটা যেমন ভয়ংকর রকমের অ্যাডভেঞ্চার ছিল ছেঁড়া দ্বীপেও তেমনি। এক ধরনের ট্রাকিং করতে হবে। বড় বড় পাথর আর শৈবালে ভরা ছেঁড়া দ্বীপের পাড়।

কোনো অবস্থায়ই এখানে খালি পায়ে হাঁটা যাবে না। তাহলে নিশ্চিত আপনার পা কাটা পড়বে। অনেকের জুতা থাকা অবস্থায়ও অসাবধানতায় পা কেটে যায়। কারণ এসব মরা শৈবালের উপরিভাগ বেশ ধারালো। আস্তে আস্তে আমরা বিপদমুক্ত রাস্তায় চলে এলাম। যেন চারদিকে সমুদ্র আর মাঝখানে একখণ্ড জমিতে আমরা। এক অদ্ভুত সুন্দর এখানকার পরিবেশ।

গাছপালা আছে অল্প অল্প, আছে চারপাশে সমুদ্রের পানি। সেই সঙ্গে পাথর আর পাথর। এখানে বাতাসের তীব্রতা অনেক। ছেঁড়া দ্বীপ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পাথর, প্রবাল এবং নারিকেল গাছে পরিপূর্ণ। জোয়ারের সময় ছেঁড়া দ্বীপের এক-তৃতীয়াংশ সাগরের পানির নিচে তলিয়ে যায়। সাগরের নীল ঢেউ যখন পাথরের গায়ে আছড়ে পড়ে তখন এক মোহনীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়। তাই অনেকে পূর্ণিমার রাতে ক্যাম্পিং করতে আসেন এ অপূর্ব ছেঁড়া দ্বীপে।

সব মিলিয়ে এ ছেঁড়া দ্বীপের রূপের বর্ণনা অল্প কথায় করা সম্ভব নয়। নিজ চোখে দেখার স্বাদটাই যেন আলাদা। এবার ফেরার পালা। ফেরার সময় আমরা জাহাজে প্রচুর ছবি তুললাম। আর বসে বসে সমুদ্রযাত্রা উপভোগ করছি। এভাবে আমরা টেকনাফ এরপর চট্টগ্রাম চলে এলাম। বাসায় আসতে আসতে রাত হয়েছিল।

কীভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে সরাসরি শ্যামলী, হানিফ, রিলেক্স, সেন্টমার্টিনসহ বিভিন্ন বাসে করে টেকনাফে যাওয়া যায়। নন এসি বাসের ভাড়া ৯০০ টাকা আর বেশিরভাগ এসি বাসের ভাড়া ১৫৫০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফের ভাড়াও ৫০০ থেকে ১ হাজার। এরপর দমদমিয়া ঘাট থেকে বেশ কয়েকটি শিপ ছাড়ে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে। যা দ্বীপে পৌঁছায় ১২টার মধ্যে। এগুলো ফিরে আসে বিকাল ৩টার দিকে সেন্টমার্টিন থেকে। শিপ ও ক্লাসভেদে এগুলোর ভাড়া ৫৫০ থেকে ১৭০০ টাকা পর্যন্ত।

থাকবেন কোথায়?

সেন্টমার্টিনে রাতে থাকার জন্য নানা মানের রিসোর্ট, হোটেল ও কটেজ রয়েছে। ছুটির দিনে গেলে আগে থেকে বুকিং করে যাওয়া সুবিধাজনক। তবে চাইলে সেখানে গিয়েও পছন্দমতো রিসোর্ট ঠিক করতে পারবেন। সর্বনিম্ন ৪০০ থেকে ১০-১৫ হাজারের রুমও আছে প্রতি রাতের জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *