Home কৃষি ও প্রকৃতি হালদা থেকে সংগৃহীত ডিম থেকে রেণু ফুটাতে ব্যস্ত খামারিরা
জুন ২২, ২০২৩

হালদা থেকে সংগৃহীত ডিম থেকে রেণু ফুটাতে ব্যস্ত খামারিরা

দক্ষিণ এশিয়ার প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র এবং বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদী থেকে কার্প জাতীয় মা মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) সংগৃহীত ডিম থেকে সনাতনী পদ্ধতিতে বহুল প্রতীক্ষিত ডিম থেকে রেণু ফুটানোর কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। যদিও মদুনাঘাট হ্যাচারিতে বেশকিছু ডিম নষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে।

মধুনগর হ্যাচারিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত মৎস্য অফিসার মো. হাসান আহসানুল কবির জানান, টেম্পারেচারের কারণে ডিম নষ্ট হতে পারে। তবে ডিম সংগ্রহকারীরা জানান অব্যবস্থাপনার কারণে ডিম নষ্ট হয়েছে। এই মৌসুমে হালদা নদীর হাটহাজারী ও রাউজান এলাকায় সংগৃহীত ডিমের পরিমাণ ১১ হাজার ৯৯০ কেজি হবে বলে জানা যায়।

গত শনিবার সকাল থেকে বজ্রসহ প্রবল বর্ষণ শুরু হলে নদীতে ঢলের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ঐদিন বিকাল থেকে কার্পজাতীয় মা মাছ নদীর রামদাস মুন্সির হাট, মাছুয়াঘোনা, আমতুয়া ও নয়াহাট এলাকায় অল্প পরিমাণ ডিমের নমুনা ছাড়ে। গত রোববার সকাল থেকে জোয়ার ও ভাটার সময় সকালে বিকালে পুনরায় নদীতে মা মাছ ডিমের নমুনা ছাড়ে।

পরদিন রবিবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে আমতুয়া আজিমারঘাট নাপিতেরঘাট মাছুয়াঘোনা খারিরমুখ, কুমারখালি ও পোড়াকপালির সুইস গেইট মাছুয়াঘোনা, কাগতিয়ারটেক, সিপাহিরঘাট, পাতাইজ্জ্যার টেক গড়দুয়ারা নয়াহাট, চেংখালী সুইস গেইট প্রভৃতি এলাকায় এই বছরের আমাবস্যা শেষ জো/তিথিতে পুরো দমে মা মাছ ডিম ছাড়ে।

গেল রবিবার রাত থেকে পরদিন সোমবার সকাল অবধি মাছের ডিম ছাড়া অব্যাহত ছিল। ডিম ছাড়ার পরিমাণ থেকে ডিম থেকে রেণু উৎপাদনের হ্যাচারি ও মাটির কুয়ার পরিমাণ কম থাকায় অনেক ডিম সংগ্রহকারী ডিম সংগ্রহ না করে নদী থেকে উঠে আসে।

এ দিকে ডিম সংগ্রহকারীরা ডিম সংগ্রহের পর হাটহাজারীতে মোট ৩টি হ্যাচারিতে ডিম থেকে রেণু ফুটানোর কাজ করে যাচ্ছে। কুওয়ার পানি পরিবর্তন করে ডিম থেকে রেণু ফুটিয়ে তারপর পোনায় রূপান্তরিত করবে। রেণু গুলোকে খাবার দেওয়া হবে, খাবারের মধ্যে রয়েছে গরুর খাঁটি দুধের সাথে ডিমের কুসুম মিক্সার করে খাদ্য প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিম সংগ্রহকারীরা।

অপর দিকে হ্যাচারি ভিত্তিক দায়িত্বরত মৎস্য কর্মকর্তা ও ডিম সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে হাটহাজারীর মাছুঘোনা হ্যাচারিতে ৫০টি কুওয়া ২৪০ বালতি, যার পরিমাণ হবে দুই হাজার ৪০০ কেজি। শাহ মাদারি হ্যাচারিতে ৪৫টি কুয়ার মধ্যে ১৯০ বালতি, যার পরিমাণ এক হাজার নয়শ কেজি।

মদুনাঘাট হ্যাচারিতে ৩০টি কুয়াতে ১৫৯ বালতি ডিম পাওয়া যায়, যার পরিমাণ ১৫ শত ৯০ কেজি। আই, ডি, এফের হ্যাচারিতে মোট ১৫টি কুওয়া রয়েছে, তার মধ্যে ১৩০ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছে ডিম সংগ্রহকারীরা যার পরিমাণ ১৩০০ কেজি। এই নিয়ে হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলায় ডিম সংগ্রহকারীরা মোট ৭২০ বালতি ডিমে সংগ্রহ করেন।

এর মধ্যে হ্যাচারি ছাড়াও রয়েছে ১০৭টি মাটির কুওয়া। এই কুওয়ার মধ্যে রাউজান উপজেলায় বিভিন্ন ডিম সংগ্রহকারীরা ৭৮টি মাটির কুওয়াতে রেণু ফুটানোর কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া আই, ডি, এফের অর্থায়নে প্রায় ১৫ জন ডিম সংগ্রহকারীদের দুইটি করে ৩০টি পাকা কুওয়া নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।

রাউজান এলাকার ডিম সংগ্রহকারীরা মোট ছয় হাজার ১০০ কেজি ও হাটহাজারী এলাকার ডিম সংগ্রহকারীরা ডিম সংগ্রহ করেছে পাঁচ হাজার ৮০০ কেজি। সব মিলে ১১ হাজার ৯৯০ কেজি হবে বলে জানান ডিম সংগ্রহকারীরা।

প্রতি বালতিতে পানিসহ ১০ কেজি করে ডিম পাওয়া গেছে। সেই হিসাবে প্রাথমিকভাবে পরিমাণ করা হচ্ছে। সংগৃহীত ডিমগুলো আজ বৃহস্পতিবার রেণুতে পরিণত হলে আগামীকাল শুক্রবার থেকে রেণু বিক্রি শুরু হবে জানা যায়।

এ দিকে ডিমগুলো নদী থেকে আহরণ করার পর সামান্য পরিমাণ ডিম নিয়ে কি পরিমাণ লবণাক্ত পানিতে রেণু ফুটানো যায় তাহা পরীক্ষা করে দেখছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রধান ডক্টর মঞ্জুরুল কিবরিয়ার নির্দেশে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীরা অনবরত পরীক্ষা করে দেখছেন এবং প্রতি মিনিটে প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় তার একটি রিপোর্ট তৈরি করছে।

হালদার রেণুর চাহিদা বেশি থাকায় হয়তো এবার হালদার পোনার মূল্যে বেশি হতে পারে। দেশের বিভিন্ন জেলা হতে রেণু বা পোনা ক্রেতারা ইতিমধ্যে হালদার পাড়ের বিভিন্ন হ্যাচারিতে আসতে শুরু করেছে। তবে মাছের পোনা কেজি কত করে বিক্রি করা হবে তা এখনো জানা যায়নি।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহিদুল আলম বলেন, গত বছরের তুলনায় ডিমের পরিমাণ বেশি। নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার পর দুর্বল হয়ে পড়ে। যাতে মা মাছ শিকার করতে না পারে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

facebook sharing button
twitter sharing button
pinterest sharing button
email sharing button
sharethis sharing button

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *