ক্রিকেটের বনেদি ক্লাবে বাংলাদেশ
অস্ট্রেলিয়ার লেগেছিল ছয় বছর। বাংলাদেশের লাগল চার বছর। ব্রিসবেনের দুঃখ অস্ট্রেলিয়া ভুলেছিল দ্য ওভালে, চট্টগ্রামের দুঃখ বাংলাদেশ ভুলল মিরপুরে। যোগসূত্রটা এতক্ষণে ধরে ফেলার কথা আপনার। ১৪৬ বছর ও ২৫০৭ ম্যাচের সুদীর্ঘ টেস্ট ইতিহাসে রানের হিসাবে সবচেয়ে বড় হারের বিব্রতকর রেকর্ড টেস্টের বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার। সেটিও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের আঙিনায়। ১৯২৮ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে ব্রিসবেনের প্রদর্শনী মাঠে অ্যাশেজের প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডের কাছে ৬৭৫ রানে হেরেছিল ডন ব্র্যাডম্যানের অস্ট্রেলিয়া। ১৯৩৪ সালের আগস্টে লন্ডনের দ্য ওভালে ফিরতি অ্যাশেজের শেষ টেস্টে বব ওয়াটের ইংল্যান্ডকে ৫৬২ রানে হারিয়ে ব্রিসবেন ট্র্যাজেডির মধুর প্রতিশোধ নেয় অস্ট্রেলিয়া। রানের হিসাবে যা এই সংস্করণে দ্বিতীয় বৃহত্তম জয়।
রেকর্ডের সোনালি পাতায় সাদা-কালো যুগের এ দুই জয়ের পরই এখন জ্বলজ্বল করছে বাংলাদেশের নাম। শনিবার মিরপুরে ঢাকা টেস্টের চতুর্থদিনে আফগানিস্তানকে ৫৪৬ রানে হারিয়ে বাংলাদেশ পেয়েছে নিজেদের সবচেয়ে বড় ও টেস্ট ইতিহাসের তৃতীয় বৃহত্তম জয়।
২০১৯ সালে চট্টগ্রামে টেস্টের নবীন দল আফগানিস্তানের সঙ্গে এই সংস্করণে প্রথম দেখায় ২২৪ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। এদেশের ক্রিকেটে সেই হারের ক্ষত নানাভাবে দগদগে হয়ে উঠত প্রায়ই। চার বছর পর মিরপুরে অন্য এক বাংলাদেশকে দেখল আফগানিস্তান। নিরঙ্কুশ দাপটে আফগানদের দুরমুশ করে মধুর প্রতিশোধের সঙ্গে ইতিহাসের পাতাও রাঙাল বাংলাদেশ। নিজেদের ২৩ বছর ও ১৩৮ ম্যাচের টেস্ট ইতিহাসে বিব্রতকর রেকর্ডের পাল্লাই ভারী বাংলাদেশের। ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে যেমন শ্রীলংকার কাছে ৪৬৫ রানে হেরেছিল টাইগাররা। টেস্টে যা লংকানদের সবচেয়ে বড় জয়। লজ্জা, হতাশার সেই অধ্যায় পেছনে ফেলে কাল বাংলাদেশ লিখল সাদা পোশাকে গৌরবের নতুন আখ্যান।
টেস্টে একুশ শতকের সবচেয়ে বড় জয় কম বড় অর্জন নয়। এই সংস্করণে ন্যূনতম ৫০০ রানের জয় আছে মাত্র চারটি। যার তিনটিই গত শতাব্দীর শুরুর দিকে। যখন টেস্টের মাঝে একদিন বিরতি থাকত। ইতিহাসের ১১৪, ১৭৬ ও ২৩৭তম টেস্টে এমন বিশাল জয়ের দুটি পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, একটি ইংল্যান্ড। শতাব্দী পেরিয়ে ২৫০৬তম টেস্টে আধুনিক যুগের সবচেয়ে দাপুটে জয়ে ক্রিকেটের দুই বনেদি দলের পাশে বসল বাংলাদেশ।