আওয়ামী লীগে নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ
রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডের ১৯টিতে কাউন্সিলর পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই পরস্পরের মুখোমুখি। এসব ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী প্রার্থী হয়েছেন। ফলে প্রতিটি ওয়ার্ডে এসব প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা বিরোধে লিপ্ত হয়েছেন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে পরস্পরের মধ্যে সংঘর্ষ, ছুরিকাঘাত ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, ২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জাকাউল ইসলামের সন্তান যুবলীগ নেতা আলি রেজা রাজিব। এ দুজনের মধ্যে শক্ত লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেন, হাবিবুর রহমান ও যুবলীগ নেতা শামীম হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন যুবলীগকর্মী হামিদুল ইসলাম সুজন, আওয়ামী লীগ নেতা কেএম ইফতেখার হামিদ ও বর্তমান কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কামরু। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান কাউন্সিলর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান টুকু ও সৈনিক লীগ নেতা মনিরুল ইসলাম। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমান কাউন্সিলর এসএম মাহবুবুল হক পাভেল, জানে আলম খান জনি, শাহীদ আহমান বারেক ও হারুন অর রশিদ। ১০ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ কর্মী মো. টনি, ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম, বোয়ালিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজ্জাক আহমেদ রাজন ও সাবেক যুবলীগ নেতা আব্বাস আলী সরদার।
১২ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা সরিফুল ইসলাম বাবু, শিহাব চৌধুরী ও তাঁতী লীগ নেতা মোকশেদ উল আলম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আব্দুল মমিন ও মহানগর যুবলীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ রানা। এ ওয়ার্ডে মোমিনের বিরুদ্ধে মাসুদ রানার কর্মী-সমর্থককে ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগ রয়েছে। ১১ জুন মোমিনের সহযোগীরা মাসুদ রানার নারী সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
১৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমান কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন আনার ও মুরাদ আলী। সম্প্রতি আনারের সমর্থকরা মুরাদের নির্বাচনি ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ করেছেন। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বোয়ালিয়া থানা আওয়ামী লীগের (পশ্চিম) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান পরশ ও আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউন নবী আল মামুন একে অপরের প্রতিপক্ষ। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছেন মহানগর যুবলীগের সহ-সম্পাদক আজিম শেখ ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ মুন্তাজ আহমেদ।
আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের চারজন প্রার্থী ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন-শাহ মখদুম থানা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জুয়েল রানা টিটু, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের (দক্ষিণ) সহসভাপতি মো. ভুট্টু, থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম ও মহানগর যুবলীগের সহসভাপতি মোখলেসুর রহমান মিলন।
১৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত বর্তমান কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমন ও বর্তমানে মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ হোসেন বাবু। ইতোমধ্যে এ ওয়ার্ডে কয়েকবার বাবু ও সুমনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
২১ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা নিযাম উল আযীম ও মহানগর যুবলীগের সহসভাপতি গোলাম ফারুক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইতোমধ্যে এ ওয়ার্ডে নিযাম ও ফারুকের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা মাহাতাব হোসেন চৌধুরী ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান রনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
২৬ নম্বর ওয়ার্ডে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মাসুদ রানা, আওয়ামী লীগ নেতা আখতার আহমেদ বাচ্চু, মখলেসুর রহমান খলিল ও মহিউদ্দিন বাবু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নুরুল হুদা সরকার ও যুবলীগ কর্মী মনিরুজ্জামান মনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
কাউন্সিলর পদে দলের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর নির্বাচন প্রসঙ্গে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল যুগান্তরকে বলেন, আমরা মেয়র নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত আছি। কাউন্সিলর পদে কে বা কারা নির্বাচন করছেন সেটি নিয়ে মাথাব্যথা নেই। আমরা মেয়র প্রার্থীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করতে কাজ করে যাচ্ছি।