ক্যাসিনো সাঈদে ফের জিম্মি দেশের হকি
ক্যাসিনো সাঈদেই জিম্মি হয়ে পড়েছে দেশের হকি। চার বছর পর আবার হকির ক্ষমতায় একেএম মুমিনুল হক সাঈদ ওরফে ক্যাসিনো সাঈদ। সই জালিয়াতি, হুমকি-ধমকি এবং মনোনয়নপত্র জমা নিতে না দেওয়াসহ নানা অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। এরপরও বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে একক প্যানেল দিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফের হকির ক্ষমতায় আসছেন সেই ক্যাসিনো সাঈদ। রোববার দুপুরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে নির্বাচন উপলক্ষ্যে ২৮ পদের বিপরীতে ২৮টি মনোনয়নপত্রই জমা পড়ে। পদের বিপরীতে অতিরিক্ত মনোনয়নপত্র জমা না পড়ায় সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন বলাই যায়।
সংগঠকদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং নানা ইস্যুতে ইমেজ সংকটে পড়ে দেশের তৃতীয় জনপ্রিয় খেলা হকি। জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদ নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে মিলে যায় ক্যাসিনো সাঈদের সঙ্গে। ফলে নির্বাচন নিয়ে অস্তিত্বের সংকটে পড়েন খোদ হকির সংগঠকরাই। আর এতে হারিয়ে যাচ্ছেন হকির প্রকৃত সংগঠকরা।
এবারের নির্বাচন ঘিরে অনেক অভিযোগ ছিল। যেমন : মনোনয়নপত্রে সই জালিয়াতি, মনোনয়নপত্র কেনা ও জমার সময় হুমকি-ধমকি, ক্যাডার বাহিনী দিয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে মহড়া দেওয়া এবং প্রকৃত সংগঠকদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখা। ফলে হকির সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত থাকা সাবেক তারকা খেলোয়াড় ও সংগঠক সাজেদ এএ আদেল বাদ পড়েছেন এবার। নিজের ক্লাব ঢাকা ইউনাইটেড থেকেই কাউন্সিলরশিপ জমা দিতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছিলেন সাজেদ আদেল।
নির্বাচনে ২৮ জনের নির্বাহী কমিটির শীর্ষ পদগুলো আগেই অনেকটা নির্ধারিত ছিল। ১৯ জন নির্বাহী সদস্য নিয়ে গত দুই দিন বেশ কাটাছেঁড়া হয়েছে। নির্বাহী সদস্যের মধ্যে দেশের শীর্ষ ক্লাব ওয়ারীর প্রতিনিধি এবং হকির বিশিষ্ট সংগঠক নাজুর জায়গা না হলেও ক্লাব কোটায় সাঈদ-রশিদের প্যানেলে ফেডারেশনে সদস্য প্রার্থী হয়েছেন ঢাকার দুই ওয়ার্ড কাউন্সিলর। মুক্ত বিহঙ্গ ক্লাব থেকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলমগীর হজ পালন করতে বর্তমানে সৌদি আরব রয়েছেন।
আলমগীরের মনোনয়নপত্রে সই নিয়ে মিডিয়ার সঙ্গে হাস্যকর কথা বলেন মমিনুল হক সাঈদ, ‘আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবেই আলমগীরের মনোনয়নপত্রের কাজ সম্পন্ন করেছি। বিমানে তাকে মনোনয়নপত্র পাঠানো হয়েছে এবং তিনি স্বাক্ষর করে আবার বিমানে সেটি পাঠিয়েছেন।’ তিন দিনের মধ্যে কীভাবে বিমানে করে জেদ্দায় মনোনয়নপত্র পাঠিয়ে মক্কায় থাকা আলমগীরের সই নিয়ে আসা সম্ভব হলো?
তার কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। আরেক কাউন্সিলর মো. আউয়ালকেও হকির নির্বাহী কমিটিতে জায়গা করে দেওয়া হয়েছে। যদিও ঢাকা দক্ষিণের ৩৩নং ওয়ার্ডের এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে রয়েছে সিটি করপোরেশনের জায়গা, ব্যক্তিমালিকানাধীন বাড়ি-মার্কেট, ওয়াকফ এস্টেট এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখল করার মতো বিস্তর অভিযোগ; যা মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়েছে।
২৮ জনের সমঝোতা কমিটির মধ্যে ১০টি পদ জেলা-বিভাগীয় সংগঠক পরিষদের। সেই ১০ পদের মধ্যে চট্টগ্রামের মো. ইউসুফ সহ-সভাপতি এবং বাকি নয়জন সদস্য হয়েছেন। এই ১০ জনের মধ্যে ময়মনসিংহের প্রতিনিধি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদোয়ান, ‘অনেক বিভাগকে বাদ দেওয়া হয়েছে, ময়মনসিংহের প্রতিনিধি রাখা হয়নি এবং তার ফর্মও তাকে ফেরত দেওয়া হয়নি।’ এদিকে এবারের নির্বাহী কমিটিতে বিকেএসপি থেকে কাউকে রাখেননি ক্যাসিনো সাঈদ।
যদিও নির্বাচনে এই সংস্থা থেকে কাউন্সিলর হয়েছিলেন কোচ জাহিদ হোসেন রাজু। যিনি গত কমিটিতেও সদস্য ছিলেন। এছাড়া বিগত কমিটিগুলোয় কাওসার আলী, নুরুল ইসলামরা বিকেএসপির প্রতিনিধিত্ব করেছেন। হকি ফেডারেশনের কমিটিতে বিকেএসপিকে না রাখায় বেশ মর্মাহত দেশের হকির অন্যতম কিংবদন্তি ও বিকেএসপির সাবেক হকি কোচ কাওসার আলী, ‘বাংলাদেশের হকি ও বিকেএসপি পরিপূরক। হকি ফেডারেশনের কমিটিতে বিকেএসপিকে রাখেনি, এটি খুবই দুঃখজনক এবং লজ্জার।’