এবার চাকরি পেলেন লাইভে সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলা সেই বাদশা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলা আলোচিত সেই বাদশা মিয়া চাকরি পেয়েছেন। এসকেএম লিমিটেড নামে চামড়ার জুতা ও পাঞ্জাবি তৈরির একটি প্রতিষ্ঠান তাকে চাকরি দিয়েছে। মঙ্গলবার এসকেএম লিমিটেড কোম্পানির চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম যোগাযোগ করে বাদশাকে চাকরির প্রস্তাব দিলে তিনি কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন বলে জানা গেছে।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর আমরা জানতে পারি- বাদশা মিয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন চাকরির আবেদন করেও চাকরি পাননি। একপর্যায়ে চরম হতাশ হয়ে ফেসবুক লাইভে গিয়ে নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলেন। এরপরই আমরা বাদশা মিয়াকে চাকরির প্রস্তাব দিই। দুয়েক দিনের মধ্যেই তিনি ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে আমাদের কোম্পানির মূল ব্রাঞ্চে যোগ দেবেন।
সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, এসকেএম লিমিটেড কোম্পানি মূলত চামড়ার জুতা এবং পাঞ্জাবি তৈরি ও বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান। দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় আমাদের প্রতিষ্ঠানের শোরুম রয়েছে। পাশাপাশি আমরা স্কিল ডেভেলপমেন্টের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরিতে কাজ করে থাকি। ইতোপূর্বে আমরা কয়েকশ আলেমদের মাঝে ফ্রি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আলোচিত এই বাদশাকেও আমরা আমাদের এ সামাজিক কাজের অংশ হিসেবে চাকরি দিয়েছি।
এসকেএম লিমিটেড কোম্পানি বাদশা মিয়াকে চাকরি দেওয়ায় কোম্পানির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বাদশা মিয়া বলেন, এসকেএম লিমিটেড কোম্পানিতে আমি আমার যোগ্যতা এবং উদ্যমতার পুরোটাই দেওয়ার চেষ্টা করব। তাদের প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞ। কারণ তারা আমাকে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ দিয়েছেন।
বাদশা মিয়া আরও বলেন, আমি জীবনের দীর্ঘ একটা সময় পড়াশোনার পেছনে ব্যয় করেছি। শিক্ষাগত যোগ্যতার বেশ কয়েকটি সার্টিফিকেট অর্জন করেছি। এরপর এসব সার্টিফিকেট নিয়ে যখন সরকারি/বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করেছি। কেউ আমাকে চাকরি দেয়নি। ইন্টারভিউ দিতে দিতে পায়ের জুতার তলা ক্ষয় করে ফেলেছি। তবুও সামান্য বেতনের কোনো চাকরিও আমার ভাগ্যে জোটেনি।
বাদশাহ আরও বলেন, পরিবারে অর্থকষ্ট থাকা সত্ত্বেও নানা উপায়ে টাকা-পয়সার ব্যবস্থা করে পড়াশোনা করেও যখন চাকরি হয়নি এবং চাকরির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বয়সও আমার শেষ হয়ে গেল তখন আমি খুব হতাশ হয়ে পড়ি। দীর্ঘদিন পড়াশোনা করে সার্টিফিকেট অর্জন আমার কাছে অনর্থক মনে হতে থাকে। সেই হাতাশা থেকেই মূলত ফেসবুক লাইভে গিয়ে সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলি এবং গ্রামেই কৃষিকাজ শুরু করি।
বাদশাহ বলেন, এসকেএম লিমিটেড কোম্পানির প্রতি আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। তারা আমার দুর্দিনে পাশে দাঁড়িয়েছে। আমাকে চাকরি দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে তিনি নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক পাশ করেন। তবে অর্থের অভাবে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে পারেননি। এর আগে ২০০৭ সালে বিজ্ঞান বিভাগে দাখিল, ২০০৯ সালে বিজ্ঞান বিভাগে আলিম পাশ করেন।
প্রায় ২০টি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার পরও চাকরি পাননি নীলফামারীর ডিমলার যুবক বাদশা মিয়া। এভাবে একসময় পার হয়ে যায় সরকারি চাকরির বয়সের সীমা। পরে ক্ষুব্ধ হয়ে ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে নিজের শিক্ষাজীবনে অর্জিত সব একাডেমিক সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলেন। এখন বেকার জীবন কাটিয়ে বাঁচার সংগ্রাম করছিলেন।