রাজশাহীতে ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় লিটন
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের এবার কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তবে প্রচার-প্রচারণায় তিনি কোনো কমতি রাখছেন না। দিন-রাত ভোটারদের কাছে তিনি ছুটছেন। প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচটি করে নির্বাচনি সভা করছেন। প্রায় ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার অপেক্ষায় থাকলেও তার কিছুটা অস্বস্তি ভর করছে। এবার ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন তিনি। বিএনপি ও জামায়াত প্রভাবিত রাজশাহী মহানগরীতে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক ভোটাররা কেন্দ্রবিমুখ হতে পারে বলে বিভিন্ন মহল থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফাঁকা মাঠে বড় ব্যবধানের জয়ে মেয়র প্রার্থী লিটন একটা রেকর্ড গড়তে চান। কিন্তু কেন্দ্রে ভোটাররা না গেলে বড় ব্যবধানে জেতা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এতে তার অস্বস্তি বাড়বে। গণসংযোগ শেষে রানীবাজারের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নৌকার মেয়র প্রার্থী লিটন মতবিনিময় সভা করছেন। সভায় তিনি কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছেন। ভোটারদের কেন্দ্রে নিতে যা যা করা দরকার সেসব করার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। যেখানেই নির্বাচনি সভা করছেন সেখানে তিনি এলাকাবাসীকে অবহেলা না করে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
শনিবার রাজশাহী চেম্বার ভবন মিলনায়তনে নির্বাচনি মতবিনিময় সভায় লিটন বলেন, দলের অনেক নেতাকর্মী মনে করছেন নৌকার শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তাই এমনিতেই নৌকা জিতে যাবে। এমনটা ভেবে নিয়ে অনেকে হয়তো ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে চাইবেন না। কিন্তু এটি কোনোভাবেই করা যাবে না। এমনটা করলে তা হবে আত্মঘাতী। তাই কেন্দ্রে গিয়ে নিজে ভোট দিতে হবে এবং অন্যকে ভোট দেওয়াতে হবে। ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের তিনি সতর্ক করেন।
লিটন আরও বলেন, একটি বিশেষ মহল নির্বাচনবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের যেতে নিরুৎসাহিত করছে বলে আমরা খবর পাচ্ছি। নিজেরা নির্বাচন না করে তারা এ নির্বাচন যাতে স্বতঃস্ফূর্ত ও অংশগ্রহণমূলক না হয় সে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তবে আমরা আশা করছি, নির্বাচনের দিন ভোটাররা দলে দলে ভোট কেন্দ্রে স্বাধীনভাবে নিজের মতামত জানাবেন। তারা উন্নয়নের প্রতীক নৌকায় ভোট দেবেন।
এ ব্যাপারে রাজশাহীর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে প্রার্থীদের পক্ষ থেকে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কেন্দ্রে গিয়ে প্রত্যেক ভোটারকে স্বাধীনভাবে মতামত দিতে কমিশনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান চালানো হচ্ছে। আমরা আশা করছি, এবার অত্যন্ত নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত রাজশাহীতে ভোটের পূর্ব-পরিবেশ চমৎকার। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে আমরা আশা করছি।
ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কিছুটা শঙ্কা আমাদের মাঝে আছে। তবে আমরা নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ড ও মহল্লায় এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের অনুরোধ করছি-তারা যেন নিজের ভোটটি দেন। তিনি আরও বলেন, ভোটের পরিবেশ নিয়ে তার কোনো অভিযোগ নেই।
ভোটারের উপস্থিতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, ভোটারের উপস্থিতি আগের নির্বাচনগুলোর চেয়ে কম হবে না বলে আশা করছি। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুরশিদ আলম বলেন, কেন্দ্রে ভোটাররা কম যাবেন-এমন আশঙ্কা তিনি করছেন না। জাকের পার্টির মেয়র প্রার্থী লতিফ আনোয়ার বলেন, ভোটার উপস্থিতি কম হবে না। কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাররা নিজের ভোট নিজে দেবেন। এবার ভোটের পরিবেশ যথেষ্ট শান্তিপূর্ণ।
ভোটারের উপস্থিতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুজ্জামান টিটো বলেন, মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। তবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ফলে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে যে শঙ্কার কথা বলা হচ্ছে তা হবে না। ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি ঘটবে বলে তার আশা। সূত্র জানায়, রাজশাহী সিটি নির্বাচনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫২ হাজার ১৫৭ জন। ২০১৮ সালের তুলনায় এবার ৩০ হাজার ১৫৭ জন ভোটার বেড়েছে। এবার মোট ভোট কেন্দ্র ১৫২টি।