Home জেলা রাজনীতি সংলাপ নিয়ে ৪ আ.লীগ নেতার ‘পাল্টাপাল্টি’ বক্তব্য
জুন ১১, ২০২৩

সংলাপ নিয়ে ৪ আ.লীগ নেতার ‘পাল্টাপাল্টি’ বক্তব্য

অনলাইন ডেস্ক: আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মঙ্গলবার ১৪ দলের সমাবেশে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন দলটির উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু। ক্ষমতাসীন দল ও জোটের বর্ষীয়ান এই নেতার বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার নতুন মাত্রা যোগ করে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংলাপের মধ্য দিয়ে দ্বাদশ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে এমন আশা করতে থাকেন অনেকে।

তবে ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যায়। এ ইস্যুতে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা-মন্ত্রীদের মধ্যে দেখা দেয় মতানৈক্য। প্রভাবশালী দুই নেতা ও মন্ত্রী আমুর বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রভাবশালী আরও একজন মন্ত্রী সংলাপের পক্ষে মত দেন। এদিকে আমির হোসেন আমু তার অবস্থান থেকে সরে আসেন।

আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা আমির হোসেন আমু বলেছিলেন, বিগত সময়ে জাতিসংঘ যেভাবে তারানকো সাহেবকে পাঠিয়েছিলেন। আমাদের দুই দলকে নিয়ে একসঙ্গে বসে মিটিং করেছিলেন। আজকেও প্রয়োজনে এ ধরনের দলাদলি না করে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি আসুক।

আওয়ামী লীগের এই বর্ষীয়ান নেতা বলেন, আমরা বিএনপির সঙ্গে মুখোমুখি বসে আলোচনা করে দেখতে চাই। কোথায় ফারাক? সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনে বাধা কোথায়? কীভাবে সেটি নিরসন করা যায়। এটি আলোচনার মধ্য দিয়েই সুরাহা হতে পারে। অন্য কোনো পথে নয়।

তিনি বলেন, আসুন, গণতন্ত্রকে অব্যাহত রাখার স্বার্থে আমরা আপনাদের সঙ্গে বসতে রাজি আছি। শেখ হাসিনা বলেছেন, আলোচনার দ্বার খোলা। তিনি বলেছেন, যে কোনোভাবে তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে তিনি প্রস্তুত।

আমির হোসেন আমুর মঙ্গলবারের বক্তব্যের পরদিন বুধবার সকালে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আলোচনার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। তিনি আরও বলেন, আমাদের নিজেদের সমস্যা আমরা আলোচনা করব, প্রয়োজন হলে নিজেরাই সমাধান করব।

জাতিসংঘের মধ্যস্থতার কথাও উড়িয়ে দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, এখন বাইরের বিষয়টা কেন বারবার আসে? জাতিসংঘ কেন মধ্যস্থতা করবে? জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করবে এমন কোনো রাজনৈতিক সংকট এই স্বাধীন বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত হয়নি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা আমাদের নেত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। তাদের সঙ্গে আমরা কী আলোচনা করব? তারা আজকে নালিশের রাজনীতি করছে। কী পেয়েছে আমরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে নালিশ করে? পেয়েছে ঘোড়ার ডিম। কিছুই পাইনি, এখন তারা আবার জাতিসংঘের মধ্যেস্থতা চায়, যা বাস্তবতা বিবর্জিত কথা।
আমুর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি দলের কথা নয়, তার ব্যক্তিগত কথা। এর বাইরে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

এদিকে সচিবালয়ে সাংবাদিকরা আমির হোসেন আমুর বক্তব্য নিয়ে অবস্থান জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমির হোসেন আমু আমাদের দলের অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা। তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি তার ব্যক্তিগত বক্তব্য। তার এ বক্তব্য নিয়ে আমাদের দলের মধ্যে, সরকারের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। এমনকি ১৪ দলের মধ্যেও কোনো আলোচনা হয়নি।

এটি সম্পূর্ণভাবে তার ব্যক্তিগত বক্তব্য। তবে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল, তিনি বলেছেন আসলে গণমাধ্যমে যেভাবে এসেছে তিনি ঠিক সেভাবে বলেননি। যেভাবেই আসুক এটি তার ব্যক্তিগত অভিমত, দল, সরকার কিংবা ১৪ দলের কোথাও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।

ওই বক্তব্যের পর আমুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, কাগজে বা গণমাধ্যমে যেভাবে এসেছে তিনি (আমু) ঠিক সেভাবে বলেননি। যেভাবেই আসুক, এটি তার ব্যক্তিগত অভিমত। এটি দল, সরকার— এমনকি ১৪ দল কোথাও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।

বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় কী লাভ হবে, সেই প্রশ্ন রাখেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে অতীতে আলোচনার অভিজ্ঞতায় বলা যায়, এই সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল যারা নির্বাচন প্রতিহত করতে চায়, যারা নির্বাচন ঠেকাতে চায়, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে কী হবে, সেটি হচ্ছে বড় প্রশ্ন।

আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিলেন, সেটিও মনে করিয়ে দেন ড. হাছান।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাড়ির দরজায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পরও দরজা খোলেনি। সেই দলের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় বসেছেন এবং আলোচনায় বসার ইচ্ছা ব্যক্তও করেছিলেন। কিন্তু কী লাভ হয়েছিল?

তবে অনেকটা আমির হোসেন আমুকে সমর্থন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বুধবার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংলাপ চলমান থাকবে। সংলাপের বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, সবকিছুই সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।

আসাদুজ্জামান খান কামাল আরও বলেন, আওয়ামী লীগ একটি জনপ্রিয় দল। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রয়েছে। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে জনগণের ক্ষমতায় জনগণকে নিয়েই চলতে হবে। আর জনগণের ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে হলে সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাই আলোচনার বিকল্প কিছু নেই।

এদিকে আমির হোসেন আমু নিজের বক্তব্যের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আলোচনাসভায় তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ইস্যুতে কাউকে আলোচনার জন্য আহ্বান করা হয়নি। আলোচনার জন্য কাউকে বলা হয়নি, কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। কাউকে আহ্বান করা হয়নি। কাউকে আহ্বান করার সুযোগ নেই। এটা আওয়ামী লীগের বাড়ির দাওয়াত নয় যে দাওয়াত করে এনে খাওয়াব।

১৪ দলের মুখপাত্র আরও বলেন, জোটনেত্রী শেখ হাসিনা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে যে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সেটা তিনি করবেন। নির্বাচন হবে সংবিধানের ভিত্তিতে। সবাইকে সে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। আগামীতে ক্ষমতা কার হাতে থাকবে সেটা জনগণ নির্ধারণ করবে। সেই পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে বলা যায়, কিন্তু আলোচনার জন্য নয়।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন নিয়ে ২০১৩ সাল থেকে বারবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল। সেই নির্বাচনে জাতিসংঘ থেকে তারানকোকে (জাতিসংঘের সাবেক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো) পাঠানো হয়েছিল। আমাদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা তাদের সামনে প্রমাণ করেছিলাম নির্বাচন না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে। একটি দেশের জন্য সাংবিধানিক শূন্যতা কাম্য হতে পারে না।

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে আমু বলেন, সেদিনও তোমরা আলোচনায় পরাজিত হয়েছিলে। তার মাধ্যমে আমাদের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়েছিল। ধারাবাহিকভাবে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটি জায়গায় আনতে সক্ষম হয়েছেন। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আজকেও নির্বাচন হবে সংবিধানের ভিত্তিতে। দেশে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হতে দেওয়া যাবে না।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এর আগে একাধিকবার বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা নাকচ করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *