Home জীবনযাপন কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি কর্মচারীদের নামে লিজ
মে ২৭, ২০২৩

কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি কর্মচারীদের নামে লিজ

ভূমি সংস্কার বোর্ডের কর্মচারীদের নামে ভাওয়াল রাজ এস্টেটের কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি লিজ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে লাভবান হচ্ছে সংস্থাটির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পক্ষান্তরে মূল্যবান এ সম্পত্তি দীর্ঘ মেয়াদে সরকারের হাত ছাড়া হচ্ছে। এছাড়া ভাওয়াল রাজ এস্টেটের তহবিল থেকে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় চার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। বিষয়গুলো তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলেও অদৃশ্য কারণে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তবে সংস্থাটির বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আবু বকর ছিদ্দীক মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, মাসখানেক আগে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি। জমি লিজ নেওয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে সংস্থার ফান্ড থেকে অর্থ আত্মসাতের ঘটনাটি শুনেছি। ইতোমধ্যে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার জয়দেবপুর মৌজার এক নম্বর সিএস খতিয়ানের ১১৪১ দাগের শূন্য ৯৮৫০ একর জমি সংস্থাটির কর্মচারী মো. আনোয়ার হোসেনের নামে লিজ দেওয়া হয়। বরাদ্দপত্রে লেখা হয় আনোয়ার হোসেন গংদের একসনা বন্দোবস্ত দেওয়া হলো। ওই জমির অবস্থান গাজীপুর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের বাংলোর পাশে এবং রাজিয়া সুলতানা স্কুলসংলগ্ন শহরের প্রাণকেন্দ্রে। সংস্থাটির সহকারী ম্যানেজার রাউফুল আমীন, চেয়ারম্যানের পার্সনাল অফিসার (পিও) মুনতাছির মামুনসহ সংস্থাটির সাবেক কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকের স্ত্রী, বোন ভাইসহ মোট ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত রয়েছে।

এ বিষয়ে সংস্থাটির সহকারী ম্যানেজার রাউফুল আমীন যুগান্তরকে বলেন, কর্মচারী হিসাবে জমি বরাদ্দ নেওয়া কি অপরাধ? এ জমি বরাদ্দ নেওয়ার বিষয়ে কোনো ধরনের অর্থকড়ি লেনদেন হয়নি। অফিস স্টাফদের কাছ থেকে কি ঘুস নেওয়া যায়? আমরা অফিস স্টাফরা এ জমি নিজেদের ব্যবহারের জন্য নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, প্রকৃতপক্ষে আমার পদোন্নতির সময় হয়েছে। পদোন্নতি ঠেকানোর জন্য আমার বিরুদ্ধে এ সব অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

সংস্থাটির চেয়ারম্যানের সামনেই তার পিও বলেন, আমরা দুই বছর আগে ওই জমি লিজ নিই। সেখানে হাউজিং করার জন্য জমিটি লিজ নেওয়া হয়েছে। সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ওই জমি বরাদ্দ নিয়ে সেখানে হাউজিং প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ছিল। ফলে অনেক কর্মচারী ওই জমিতে বিনিয়োগ করেছেন। তাদের প্রত্যেককে একাধিক ফ্ল্যাট পাওয়ার লোভ দেখিয়ে অর্থ নেওয়া হয়েছে। এখন সব জলে গেছে। কর্মচারীরা আরও জানান, সংস্থাটির সাবেক কর্মকর্তাদের অনেকের আত্মীয়স্বজনরা উল্লিখিত জমি পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। কারণ সেখানে বড় ধরনের ইমারত তৈরি করার কথা ছিল।

ভাওয়াল রাজ এস্টেটের ফান্ড থেকে প্রায় তিন কোটি ৯৭ লাখ ৯৬ হাজার ১২১ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। ভাওয়াল এস্টেটের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এই টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। বিদেশ থেকে আনা বিশেষ ধরনের কলম ব্যবহার করে তিনি চেক টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে এ টাকা আত্মসাৎ করেন। এ বিষয়ে ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান যুগান্তরকে বলেন, আমার পিও সাহেব ভালো বলতে পারবেন। তার কাছ থেকেই শুনুন। ডাকা হয় পিওকে।

পিও চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে জানান, হিসাবরক্ষক আবুল বাশার ফাইলে যে পরিমাণ অর্থ অনুমোদন দেওয়া হতো টাকার অঙ্ক চেকের পাতায় বসানোর সময় ফিগারের আগে এবং পরে এক ইঞ্চি লম্বা দাগ টেনে দিতেন। টাকা তোলার জন্য ব্যাংকে গিয়ে বিশেষ কলমে ফিগারের আগের ও পরের দাগ মুছে ফেলে প্রকৃত সংখ্যার আগে এবং পরে বাড়তি অংক বসিয়ে টাকা তুলে নিতেন। এভাবে আবুল বাশার ২০১২ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ভাওয়াল রাজ এস্টেট থেকে প্রায় চার কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নিজের মোবাইল নম্বর অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ব্যাংকে দিয়ে রেখেছেন। ব্যাংক থেকে ফোন করলে তিনিই ধরতেন এবং ইচ্ছেমতো টাকা তুলে নিতেন। বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের ঘটনা জানাজানি হলে আবুল বাশার গাঢাকা দিয়েছেন।

এ অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে সহকারী ম্যানেজার রাউফুল আমীনও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। জানতে চাইলে রাউফুল আমীন যুগান্তরকে বলেন, এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। আমরাই বাশারের দুর্নীতি ধরেছি। আমাকে এ বিষয়ে দুদক ডেকেছে। আমরা সাক্ষ্য দিয়ে এসেছি।

অভিযুক্ত আবুল বাশারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সংস্থাটির চেয়ারম্যান জানান, ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা হয়েছে। সে পলাতক রয়েছে। এছাড়া আইন অনুসারে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্য কর্মকর্তাদের দায় আছে কিনা তা তদন্ত হবে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *