Home সারাদেশ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে ৯ জন নিহত—বজ্রপাত থেকে বাঁচতে সরকারি নির্দেশনা
মে ২৪, ২০২৩

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে ৯ জন নিহত—বজ্রপাত থেকে বাঁচতে সরকারি নির্দেশনা

অনলাইন ডেস্ক,

বাংলাদেশের চার জেলায় বজ্রপাতে ৯ জন মারা গেছেন। নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুড়িগ্রাম ও চাঁদপুর জেলায় মঙ্গলবার (২৩ মে) বিভিন্ন সময় এসব বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এদিকে বজ্রপাতে প্রাণহানি ও হতাহতের ঘটনা এড়াতে সরকার কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে।

 

নরসিংদী জেলায় নারীসহ ৪ জনের মৃত্যু

নরসিংদী জেলার পৃথক স্থানে বজ্রপাতে নারীসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে পৃথক সময়ে জেলার রায়পুরা, মনোহরদী ও শিবপুর উপজেলায় এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন-রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষা ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের ইসমাইল মিয়ার ছেলে জাবেদ মিয়া (১২), শ্রীনগর ইউনিয়নের ফকিরের চর গ্রামের মোমরাজ মিয়ার স্ত্রী সামসুন নাহার (৪৫), শিবপুরের সাধারচরের খোরশেদ মিয়ার ছেলে কৃষক খোকন মিয়া (৩০) এবং মনোহরদী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের পাতরদিয়া গ্রামের মৃত বাদল মিয়ার ছেলে রায়হান মিয়া (৩০)।

নিহতদের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, বিকেলে বাড়ির অদূরে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন পাতরদিয়া গ্রামের প্রবাস ফেরত রায়হান মিয়া। হঠাৎ বজ্রসহ ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে বাড়ি ফেরার পথে বাড়ির অদূরে পৌঁছামাত্র বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে মারা যান রায়হান মিয়া। দুই মাস আগে ছুটিতে দেশে আসেন কাতারপ্রবাসী রায়হান মিয়া।

অন্যদিকে, রায়পুরা উপজেলায় মঙ্গলবার বিকেলে বজ্রপাতে নিহত হন গৃহবধূ সামসুন নাহার। শ্রীনগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জালাল উদ্দিন জানান, ওই গৃহবধূ খড়ের গাদা তৈরির জন্য বাড়ির পাশের একটি জমি থেকে খড় আনতে গিয়েছিলেন। তখন বৃষ্টির সঙ্গে ব্যাপক বজ্রপাত হয়।

এদিকে, মঙ্গলবার বিকেলে কৃষিজমিতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন শিবপুরের সাধারচর এলাকার কৃষক খোকন মিয়া।

এছাড়া, মঙ্গলবার বিকেলে একই উপজেলার নিলক্ষা ইউনিয়নের গোপীনাথপুরে বাড়ির সামনে ফুটবল নিয়ে খেলার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় জাবেদ মিয়া নামে এক কিশোরের।

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২ জনের মৃত্যু

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর ও বাঞ্ছারামপুরে পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় ২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া, আহত হয়েছে আরও ১ জন।

মঙ্গলবার বিকেলে নাসিরনগরে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের বজ্রপাতে এক ইটভাটা শ্রমিকের মৃত্যু হয়। নিহত মোজাম্মেল হক উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের মতি মিয়ার ছেলে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, বজ্রপাতে ১ জন নিহত ও কাইয়ূম নামে এক ব্যক্তি আহত হন। নিহত পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে মিত্র চাকমা জানান, বজ্রপাতে মনু মিয়া নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার মানিকপুরে তিনি জমিতে কাজ করছিলেন, তখন বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

কুড়িগ্রামে ২ জনের মৃত্যু

কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর ও চিলমারী উপজেলায় বজ্রপাতে ২ জন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নিহতরা হলেন- উলিপুর উপজেলার শাহজালাল (৪৫) ও চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের ওব্রু শেখ (৫০)।

 

চাঁদপুর ১ জনের মৃত্যু

চাঁদপুর জেলায় আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নে ঘটনাটি ঘটে।

নিহত মো. হাসান মিজি (৪৫) উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ছোট সুন্দর গফুর মিজি বাড়ির মৃত মো. কলিমউদ্দিন মিজির ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, হাসান মিজি বাড়ির পাশের বাগানে আম কুড়াতে যান। তখন প্রচণ্ড ঝড় শুরু হয়। ঝড় ও বজ্রবৃষ্টি উপেক্ষা করে বাগানে আম কুড়ানোর সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে রামপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মো. আল মামুন পাটওয়ারী ইউএনবিকে জানান, স্থানীয় ছোট সুন্দর বাজারের সরকারি রেজিস্টার্ড চিকিৎসক এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

 

বজ্রপাত থেকে বাঁচতে সরকারি নির্দেশনা

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে বজ্রপাত অন্যতম প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এর আঘাতে প্রাণহানি ও হতাহতের খবর নিয়মিত আসছে। সেজন্য বজ্রপাতে প্রাণহানি ও হতাহতের ঘটনা এড়াতে সরকার কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর বজ্রপাতে ২৫০ জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া, বজ্রপাতে প্রচুরসংখ্যক গবাদি পশু মারা যায় বা আহত হয়।

তথ্য অধিদপ্তরের (পিআইডি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত দেশে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতে হতাহতের ঘটনা ঘটে এবং সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে বিস্তীর্ণ ও হাওর এলাকায়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বজ্রপাতে ২ হাজার ১৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বিবেচনাকরে সরকার ২০১৬ সালে এটিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে

মৃত্যু ও হতাহতের ঘটনা এড়াতে সরকার কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা জারি করেছে। সেগুলো হলো-

১. বজ্রঝড় সাধারণত ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট স্থায়ী হয়। এ সময়টুকু ঘরে অবস্থান করতে হবে। অতি জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে রাবারের জুতা পরে বাইরে যাওয়া নিরাপদ। এটি বজ্রঝড় বা বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা দেবে।

২. বজ্রপাতের সময় ধানখেত বা খোলামাঠে যদি থাকেন তাহলে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসে পড়তে হবে।

৩. বজ্রপাতের আশঙ্কা দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। ভবনের ছাদে বা উঁচু ভূমিতে যাওয়া উচিত হবে না।

৪. বজ্রপাতের সময় যেকোনো ধরনের খেলাধুলা থেকে শিশুকে বিরত এবং তাদের ঘরের ভেতরে রাখতে হবে।

৫. খালি জায়গায় যদি উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, ধাতব পদার্থ বা মোবাইল টাওয়ার থাকে, তার কাছাকাছি থাকবেন না। বজ্রপাতের সময় গাছের নিচে থাকা বিপজ্জনক।

৬. বজ্রপাতের সময় ছাউনিবিহীন নৌকায় মাছ ধরতে না যাওয়াই উচিত হবে। সমুদ্রে বা নদীতে থাকলে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে।

৭. যদি কেউ গাড়ির ভেতর অবস্থান করেন, তাহলে গাড়ির ধাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংযোগ রাখা যাবে না।

৮. বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিকে ধরার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। কারণ, আহত কিংবা মৃত ব্যক্তির শরীরে বিদ্যুৎ থাকে না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে। বজ্রপাতে আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস এবং হৃৎস্পন্দন দ্রুত ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। কয়েক মিনিটের মধ্যে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে পারলে বাঁচানো সম্ভব হতে পারে। বেশি দেরি হলে আহত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে।

৯. বজ্রপাতে আহত হলেও কিছু কিছু মানুষের হৃদপিণ্ড বন্ধ হয়ে তাৎক্ষনিকভাবেই মারা যায়। আবার কারও-কারও হৃদপিণ্ড একটু বন্ধ হয়ে আবার চালু হয়। তাদের যদি হাসপাতালে আনা যায়, তখন বাঁচানো সম্ভব হতে পারে।

১০. যদি আহত ব্যক্তির হৃৎপিণ্ড সচল থাকে তাহলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে সিপিআর (কৃত্রিক শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা) দিতে হবে। সেজন্য সিপিআর সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি। সিপিআর দিয়ে হৃদপিণ্ড সচল রাখতে হবে। এর মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স বা কোনো গাড়ি ডেকে দ্রুত আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *