পতন আঁচ করতে পেরেই সরকার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল
অনলাইন ডেস্ক,
ঢাকার ধানমন্ডিতে পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, মঙ্গলবার ঢাকার আগে খুলনা, পটুয়াখালী, নেত্রকোনা, ফেনীসহ বিভিন্ন জেলায় বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা চালানো হয়েছে। কর্তৃত্ববাদী সরকার তাদের দুঃশাসনকে আড়াল করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে এই ঘৃণ্য হামলা চালাচ্ছে।
মঙ্গলবার বিকেলে ধানমন্ডির সায়েন্স ল্যাব এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ধানমন্ডি থেকে আসা বিএনপির পদযাত্রা সায়েন্স ল্যাব এলাকায় আটকে দেয় পুলিশ। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশের লাঠিপেটার পর ইটপাটকেল ছুড়ে জবাব দেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। পরে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
এ ঘটনা নিয়ে রাতে এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, পুলিশের হামলা, কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেটে তাঁদের বহু নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ধানমন্ডি থানা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম, ধানমন্ডি থানার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মনির সিকদার, সদস্য লিটন মোল্লা, মুগদা থানা শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মজিবর মোল্লা, ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খন্দকার জিয়াউর রহমান, নিউমার্কেট থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আউয়াল আহমেদ ও ছাত্রদল নেতা আবুল বাশার, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক রয়েছেন।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ২৫ জনের বেশি বিএনপির নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে বলে দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল। তিনি জানান, গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী শেখ রবিউল আলম, ধানমন্ডি থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন, থানা বিএনপির সাবেক সদস্য রাইসুল ইসলাম, ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাওন, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড নেতা মালেক, নিউমার্কেট থানা বিএনপি নেতা আবদুল মালেক, হাজারীবাগ থানার ২২ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক সাব্বির আহমেদ, নিউমার্কেট থানা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. রানা রয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নির্বিঘ্নে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অধিকার কেড়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিভিন্ন জেলায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকার-দলীয় সন্ত্রাসীরা যে পৈশাচিক তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে, তা নজিরবিহীন। তাদের হামলায় অনেকে গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন, কেউ কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। আবার অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার এবং মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, শাসকগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ মদদ না থাকলে প্রশাসন, দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা এমন নৃশংস কর্মকাণ্ড সংঘটন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি পালনকালে কয়েক দিন ধরে ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে নেতা-কর্মীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা, মিথ্যা মামলাসহ গ্রেপ্তারের ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হয়েছে, সারা দেশকে নিরাপত্তাহীনতার অতল গহ্বরে নিমজ্জিত করা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকার নিজেদের পতন আঁচ করতে পেরেই এখন আরও তীব্র মাত্রায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম কর্মসূচিতে হামলার ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।