Home ধর্মীয় সংবাদ ইসলামে নারীর চাকুরীর অধিকার
মে ২৩, ২০২৩

ইসলামে নারীর চাকুরীর অধিকার

ইসলামে নারীর চাকুরীর অধিকার
ইসমালে নারীর অবস্থান পার্টঃ-০৮ (#নারীর_চাকুরী)

নানাবিধ কারণে বর্তমানে নারীর উপার্জন বিষয়ে প্রচুর আলোচনা-সমালোচনা ও তর্ক-বিতর্ক চলছে। অতি রক্ষণশীলরা নারীদের উপাজর্নের বিষয়টি এখনও মেনে নিতে পারেননি। অবশ্য মধ্যপন্থীদের অভিমত হলো, নারী তার স্বকীয়তা, আলাদা বৈশিষ্ট্য ও মান-সম্মান বজায় রেখে আয় উপার্জনের পথ বেছে নিতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ তারা নবী (সা.)-এর আমলের বেশ কয়েকজন মহিলা সাহাবির কথা উল্লেখ করেন।
ওই সাহাবিরা মদিনার বাজারে বিভিন্ন ব্যবসা করত এমনকি অনেকে কৃষি কাজও করেছেন। সেসব অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ।

একটি উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানাসহ অন্যান্য শিল্প-প্রতিষ্ঠানে পুরুষের পাশাপাশি চল্লিশ লক্ষাধিক নারী কাজ করেন। এই কর্মজীবী নারীদের উপার্জন সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে এটা অনস্বীকার্য।

প্রয়োজন, অপরাগতা কিংবা ঠেকায় পড়ার পরিস্থিতি ছাড়া সাধারণ অবস্থায় নারীদেরকে ঘরে অবস্থান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শরীয়ত তাদের ওপর এমন দায়িত্ব আরোপ করে নি, যার কারণে তাদের ঘরের বাইরে যেতে হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى

‘আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং জাহিলিয়াতযুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’(সূরা আহযাব ৩৩)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,

الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ ، وَإِنَّهَا إِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ ، وَإِنَّهَا لا تَكُونُ أَقْرَبَ إِلَى اللَّهِ مِنْهَا فِي قَعْرِ بَيْتِهَا

‘নারী গোপন জিনিস, যখন সে ঘর থেকে বের হয় শয়তান তাকে তাড়া করে। আর সে আল্লাহ তাআলার সবচে’ নিকটতম তখন হয় যখন সে নিজের ঘরের মাঝে লুকিয়ে থাকে।’ (তাবরানী ২৯৭৪)

নারী মসজিদে যাওয়ার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,وَبُيُوتُهُنَّ خَيْرٌ لَهُنَّ ‘তাদের জন্য তাদের ঘর উত্তম।’ (আবু দাউদ ৫৬৭) এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানার জন্য জন্য পড়তে পারেন

নারী চাকরির খাতিরে ঘর থেকে বের হতে পারবে। তবে এর জন্য কিছু নিয়ম ও শর্ত রয়েছে। নিয়ম ও শর্তগুলো মেনে চললে নারীর জন্য ঘর থেকে বের হওয়া জায়েয হবে; অন্যথায় নয়। যেমন,

– যদি সত্যিকারে তার চাকরি করার প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে তার জন্য চাকরি করা জায়েয হবে।

– চাকরিটা তার দৈহিক, মানসিক স্বভাব ও রুচির সঙ্গে সামন্জস্যশীল হতে হবে। যেমন, ডাক্তারি, নার্সিং, শিক্ষা, সেলাই কিংবা এ জাতীয় পেশা হতে হবে।

– কর্মক্ষেত্রে পর্দার পরিপূর্ণ পরিবেশ থাকতে হবে। অন্যথায় জায়েয হবে না।

– চাকরির কারণে যাতে পরপুরুষের সঙ্গে সফর করতে না হয়।

– কর্মক্ষেত্রে আসা-যাওয়ার পথে যাতে কোন হারাম কাজ করতে না হয়। যেমন, ড্রাইভারের সঙ্গে একাকী যাওয়া, পারফিউম ব্যবহার করা ইত্যাদি।

– নারীর প্রধান কাজ ও দায়িত্ব হচ্ছে স্বামীর খেদমত করা, তার সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা ও মাতৃত্বের দায়িত্ব পালন করা। যদি চাকরি করতে গিয়ে এসব দায়িত্ব পালনে ব্যাপক অসুবিধা হয় তাহলে তার জন্য চাকরি করা জায়েয হবে না। (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ ২/৯৮১ ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/৩৫৯)

ইসলাম সর্বদা নারীদের শালীন পরিবেশে শিক্ষা, কাজ ও চলাফেরার কথা বলে। শরিয়ত নির্ধারিত গণ্ডির মধ্যে থেকে নারীরা অবশ্যই শিক্ষা অর্জনসহ অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারবে। ইসলাম কোথাও নারীকে বন্দি করে রাখার কথা বলেনি। ইসলাম নারী শিক্ষার প্রতি যেমন গুরুত্বারোপ করেছে তেমনি নারী-পুরুষের ভোটাধিকারেও কোনো ধরনের পার্থক্য সৃষ্টি করেনি। এমনকি ইসলাম নারীকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে কাজ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অধিকারও প্রদান করেছে।

কোরআনে কারিমের সূরা বাকারার ১৮৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমি ব্যবসাকে হালাল করেছি এবং সুদকে হারাম করেছি।’ এই আয়াতে ব্যবসা হালাল হওয়া এবং সুদ হারাম হওয়া নারী-পুরুষের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। একজন পুরুষ হালাল পন্থায় যেসব ব্যবসা করতে পারবে। নারীও সে ধরনের ব্যবসা করতে পারবে। সে বিবাহিত হোক কিংবা অবিবাহিত হোক। সে তার অর্জিত সম্পদের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণকারী। সে কোনো বিধিনিষেধ ছাড়াই তার সম্পত্তির ব্যাপারে সব ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে, যা একজন পুরুষের জন্যও প্রযোজ্য।

কোরআন ও হাদিসের কোনো স্থানে নারীর কাজকর্মের ব্যাপারে কোনো বিধিনিষেধ আরোপিত হয়নি। শুধু দু’টি বিষয়ের প্রতি সঙ্গত কারণে নির্দেশ দিয়েছে। শর্ত দু’টি হলো প্রথমত, ব্যবসা হতে হবে হালাল পদ্ধতিতে ও শরিয়ত নির্ধারিত সীমারেখার মধ্যে। দ্বিতীয়ত, পর্দা রক্ষা করতে হবে। তাছাড়া ইসলাম নারীদের সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী কোনো পেশায় নিয়োজিত হতেও নিষেধ করেছে।

এ ছাড়া শরিয়ত অনুমোদিত সব ব্যবসা বা কাজ করার অনুমতি দিয়েছে ইসলাম। এখানে ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই। এখানে একটি কথা বলে রাখা ভালো, ইসলাম কিন্তু নারীদের কোনো আয়-রোজগারের দায়িত্ব দেয়নি। দেয়নি পরিবার লালন-পালন ও ভরণ-পোষণের কর্তব্য। ইসলামের পারিবারিক ব্যবস্থায় গোটা পরিবারের অর্থনৈতিক প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণের দায়িত্ব একমাত্র পুরুষের।

ইসলামের পারিবারিক ব্যবস্থায় নারীর আয়ের অনেক উৎস ও মাধ্যম থাকলেও ব্যয়ের বাধ্যতামূলক কোনো খাত নেই। ইসলাম নারীর ওপর অর্থনৈতিক কোনো দায়-দায়িত্ব চাপায়নি। পরিবারের যাবতীয় আর্থিক দায়-দায়িত্ব বহন করা পুরুষের ওপর অর্পিত হয়েছে। সেহেতু নারীকে তার জীবিকার জন্য চাকরি করার প্রয়োজন নেই, সেহেতু নারীর চাকরি তার ইচ্ছাধীন। তবে পুরুষের উপার্জন যদি সংসার চালানোর জন্য যথেষ্ট না হয় এবং প্রকৃত অভাবের সময়, সঙ্কটকালে উভয়েরই চাকরি করার প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে চাকরির বিষয়ে নারীর স্বাধীনতা রয়েছে। ইচ্ছা করলে সে চাকরি করতে পারে, ইচ্ছা করলে নাও করতে পারে। কেউ জোর করে তার ঘাড়ে চাকরির বোঝা চাপিয়ে দিতে পারে না। এমনকি তার উপার্জিত অর্থ-সম্পদও কেউ নিতে পারবে না। তার জমা-খরচে কেউ খবরদারি ও নজরদারি করতে পারবে না। উপার্জনকারী নারী তার ইচ্ছামতো খরচের অধিকার রাখে। এটাই ইসলামের বিধান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *