পাকিস্তান সরকার ও ইমরান খানের বাঁচা-মরার লড়াই
গুরুতর রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকটে দিন কাটাচ্ছে পাকিস্তান। সঙ্গে অর্থনৈতিক দুরবস্থার বাড়তি চাপ। একদিকে শক্তিশালী সামরিক সংস্থার সঙ্গে ১৩টি রাজনৈতিক দলের জোট সরকার আর অন্যদিকে ইমরান খান। সবমিলিয়ে পাকিস্তানে ‘ইমরান খান বনাম সরকার’ বাঁচা-মরার লড়াই চলছে রাজনীতিতে। হয় ইমরান খান টিকবেন নয়তো সরকার।ইমরান খানের দল পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়া দুই প্রদেশে ক্ষমতায় ছিল। ২০২২ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে তাকে অপসারণ করা হয়। তার ক্ষমতাচ্যুতির পর ২০২৩ সালের আগস্টের আগে সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় চাপপ্রয়োগে ১২০টিরও বেশি পিটিআই সদস্য সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। কিন্তু এই জোট সরকার একটি অসম্পূর্ণ জাতীয় পরিষদ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে বহাল রয়েছে। নিজ দলের স্বার্থ রক্ষায় বেশ কিছু আইনও পাস করেছে।
সংবিধান অনুযায়ী, বিধানসভা ভেঙে যাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে পুনরায় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে বাধ্য নির্বাচন কমিশন। ইমরানের শাহবাজ শরিফের ওপর চাপপ্রয়োগের কৌশলটি ব্যর্থ হয়। সরকার নির্বাচন পরিচালনা করতে নির্বাচন কমিশনকে তহবিল অথবা নিরাপত্তা কোনোটাই দেয়নি। ইমরান খানের জনপ্রিয়তা ও নির্বাচনে অপমানজনক পরাজয়ের ভয় থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো সাধারণ নির্বাচন চায় না।
তাদের আশঙ্কা, ইমরান খান পুনরায় ক্ষমতায় বসলে তিনি বিরোধীদের ৩২টি এনএবি অধ্যাদেশ নামে দুর্নীতি আইন ও সংশোধনী বাতিল করবেন। বর্তমান সরকারের ভয় উঠে আসে ফেডারেল সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘হয় ইমরান খান আর না হয় আমরা টিকে থাকব।’ পাকিস্তানের মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইমরান খানের বক্তৃতা প্রচার করা হয় না। তার বক্তৃতাগুলো ওঠে আসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নির্ভর করে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক ধরনটা এমন যে, শাসকগোষ্ঠীকে চ্যালেঞ্জ করতে সক্ষম কোনো জনপ্রিয় নেতাকেই সহ্য করে না ‘প্রথাগত’। দেশের শাসন ব্যবস্থার সাধারণ ধরন এটি। ফাতিমা জিন্নাহ থেকে শুরু করে, জুলফিকার আলী ভুট্টো অথবা বেনজির ভুট্টো-তাদের কেউই হয় ক্ষমতায় বসতে পারেনি অথবা কোনোক্রমে ক্ষমতা হাতে এলেও তা বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনি। একই ধারাবাহিকতায় এবার পালা ইমরান খানের। যদিও শাসকগোষ্ঠীর প্রত্যাশার বিপরিতে ইমরান খান দেশজুড়ে যেমন গড়ে তুলেছেন কঠোর প্রতিরোধ তেমনি তার স্থানও জনপ্রিয়তার তুঙ্গে।
বিভিন্ন জনমত জরিপ থেকে জানা যায়, ইমরান তার প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরিফ অথবা বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি থেকে অনেক বেশি জনপ্রিয়। তার জনপ্রিয়তার রেটিং ৬০ শতাংশেরও বেশি। যেখানে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরীফের রেটিং মাত্র ৩০ শতাংশ। বিভিন্ন জনমত জরিপ অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের জনপ্রিয়তার রেটিং প্রায় শূন্যের কোঠায়। নেই বললেই চলে।
আদনান আলী: পাকিস্তান ন্যাশনাল টেলিভিশন সনু নিউজের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ।