শাসক হয়েও সাধারণ ছিলেন ওমর
খলিফা হওয়ার পর তার প্রথম দিকের জুমার খুতবাগুলোর একটিতে নিুোক্ত ভাষায় তিনি তার অনুবর্তীদের প্রতি আহ্বান জানান এভাবে, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তোমরা আমার অংশীদার। তোমাদের ভালো পরামর্শ দ্বারা আমাকে সাহায্য করো। আমি যদি আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.)-এর পথে চলি তাহলে আমাকে অনুসরণ করো। আমি যদি বিপথগামী হই, আমাকে সংশোধন করো। তোমাদের পরামর্শ ও মতামত দ্বারা আমাকে শক্তিশালী করো’ (হেলমিনিস্কি, পৃ : ৪০৬)।
একবার তিনি বলেছিলেন, ‘গ্রীষ্মে একটি এবং শীতে একটি জামা ছাড়া আল্লাহর এই মালসামানের কিছুই আমার জন্য নয়। যা হজের জন্য এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের জন্য যথেষ্ট। এর বাইরে, অন্য যে কোনো মুসলমানের মতোই আমার অতিরিক্ত কোনো অধিকার নেই’ (হেলমিনিস্কি, পৃ : ৪০৮)।
হজরত উমর (রা.) সম্পর্কে এ কথা প্রায়ই বলা হয়ে থাকে, তার একটি মাত্র জামা ছিল আর সেটাও ছিল তালি মারা। অন্য মুসলমানদের মতো খেজুর বা তালগাছের পাতায় তৈরি বিছানাতে তিনি ঘুমাতেন। সমাজের দরিদ্রতম ব্যক্তিদের স্বস্তি ও নিরাপত্তা কতটুকু রয়েছে তা খতিয়ে দেখার জন্য প্রায়ই তিনি রাতের আঁধারে মদিনার অলি-গলিতে ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াতেন। মানুষ কীভাবে ঘুমাচ্ছে, তাদের খাবার, পানি আছে কিনা, কাপড় আছে কিনা, তারা নিরাপদ আছে কিন্তু এসব দেখার জন্য তিনি (রা.) রাস্তায় টহল দিতেন।
এমনকি একদিন তিনি যখন রাস্তায় হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন, তখন তিনি লক্ষ করলেন, এক মহিলা একটি হাঁড়িতে কিছু রান্না করছে আর তার সন্তানরা তাকে ঘিরে অপেক্ষা করছে। জিজ্ঞেস করে তিনি জানতে পারলেন, হাঁড়িতে কোনো খাবার নেই, সন্তানদের প্রবোধ দেওয়ার জন্য সেটি চুলায় চাপানো হয়েছে। আরও জানা গেল, দুদিন ধরে তারা কিছু খায়নি।
এ দৃশ্য দেখে হজরত উমর (রা.)-এর চোখে পানি চলে এলো। হজরত উমর (রা.) তৎক্ষণাৎ বাইতুল মালে চলে গেলেন এবং মহিলার জন্য খাদ্যদ্রব্য নিয়ে এলেন। একজন কর্মচারী সেগুলো বহন করতে চাওয়ায় হজরত উমর (রা.) তা প্রত্যাখ্যান করলেন এবং বস্তা স্বীয় স্কন্ধে তুলে নিয়ে বললেন, কেয়ামতের দিন আমার বোঝা কে বহন করবে? খাদ্যদ্রব্য সেই মহিলাটির কাছে পৌঁছে দিয়ে তিনি বললেন, সে যেন মাসোহারা নেওয়ার জন্য নিয়মিত বাইতুল মালের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে।